অফসাইড ধরতে কাতার বিশ্বকাপেই ব্যবহার হতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ থাকতে পাঁচজন বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামানোর অস্থায়ী নিয়ম চালু করেছিল ফিফা। দোহায় আজ ফুটবলের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ডের (আইএফএবি) বৈঠকে নিয়মটি স্থায়ী রূপ পেল। শীর্ষ স্তরের ফুটবলে এখন থেকে পাঁচজন বদলি নামানোর নিয়মটি অনুমোদন করেছে আইএফএবি ও ফিফা। এ ছাড়া নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় কাতার বিশ্বকাপ থেকেই দেখা যেতে পারে ‘সেমি–অটোমেটিক’ অফসাইড সিস্টেম। এই প্রযুক্তি কাতার বিশ্বকাপে ব্যবহার করার খুব কাছাকাছি রয়েছে বলে জানানো হয়।

ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছেন, ‘ফুটবলের সঙ্গে জড়িত সবার শক্ত সমর্থনের ভিত্তিতে’ বদলির নিয়ম পাল্টানো হয়েছে। আইএফএবির বার্ষিক এই বৈঠক শেষে ইনফান্তিনো জানিয়েছেন, ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া কাতার বিশ্বকাপে সেমি–অটোমেটিক অফসাইড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে কি না, তা বিশেষজ্ঞরা ঠিক করবেন।

অফসাইড নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। গত ২৮ মে চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বশেষ ফাইনালেই করিম বেনজেমার বাতিল হওয়া গোলটি আসলেই অফসাইড ছিল কি না, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক হয়। সংবাদ সংস্থা এএফপি কাল জানিয়েছে, অফসাইড নিয়ে নিখুঁত সিদ্ধান্ত দিতে এই প্রযুক্তিতে অপটিক্যাল ট্রাকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হবে। ইনফ্রারেড মার্কারের মাধ্যমে রিয়েল–টাইমে মাঠে খেলোয়াড় ও বলের অবস্থান বোঝা যাবে এই প্রযুক্তিতে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ এবং কাতারে গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আরব কাপে সেমি অটোমেটেড অফসাইড সিস্টেম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়।

এএফপি কাল জানিয়েছিল, কাতার বিশ্বকাপ থেকেই এই প্রযুক্তি চালু করা হবে কি না, সে বিষয়ে আইএফএবি একা সিদ্ধান্ত নেবে না। তবে সংস্থাটি সবুজ সংকেত দিলে ফিফা মাঠে নিয়মটির প্রয়োগ ঘটাতে পারে। ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির (ফিফা) পক্ষ থেকে এএফপিকে বলা হয়, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেমি অটোমেটেড অফসাইড সিস্টেম আরও ভালোভাবে পরখ করে দেখা দরকার। এটা স্রেফ ভিএআরকে সাহায্যকারী প্রযুক্তি।’

কিংবদন্তি ইতালিয়ান রেফারি এবং ফিফা রেফারিজ কমিটির চেয়ারম্যান পিয়েরে লুইজি কলিনা মনে করেন, সেমি অটোমেটেড অফসাইড সিস্টেম চালু হলে তা ভিএআর প্রযুক্তিকে আরও নিখুঁত ও অনেক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে। মাঠের ক্যামেরাগুলো ব্যবহার করে বল ও খেলোয়াড়ের সঠিক অবস্থান জানিয়ে দেবে এই প্রযুক্তি। মাঠে প্রতিটি খেলোয়াড়ের শরীরে ২৯টি জায়গা মার্ক করে তাঁদের ত্রিমাত্রিক অবয়ব তৈরি করবে সেমি অটোমেটেড অফসাইড সিস্টেম। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশনে ঘটনার মুহূর্তটা দেখাবে মাঠের বড় পর্দায়। এই প্রযুক্তিকে ফিফা ‘সেমি অটোমেটেড’ বলছে, কারণ শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ম্যাচ অফিশিয়ালরাই নেবেন।

কলিনার ভাষায়, ‘কেউ কেউ এটাকে হয়তো “রোবট অফসাইড” বলছেন। কিন্তু তা নয়। এই প্রযুক্তিটা স্রেফ মানুষের ব্যবহারের জন্য।’

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ জানিয়েছে, দোহায় আজকের বৈঠকে আরও কিছু বিষয় নিয়ম হিসেবে অনুমোদন পেতে পারে, যা চালু হবে ১ জুলাই থেকে। পাঁচ বদলির জন্য ম্যাচে আলাদা করে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এ ছাড়া কোনো খেলোয়াড় যদি প্রতিপক্ষের নিশ্চিত গোল বাঁচাতে ‘হ্যান্ডবল’–এর অপরাধ করেন, তখন তাঁকে অবশ্যই লাল কার্ড দেখানো হবে, ঘটনাটা মাঠের কোথায় ঘটেছে, তা দেখা হবে না—এ বিষয়েও দোহার বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা।

কনকাশন বদলি চালুর নিয়মটি স্থায়ী হবে কি না, সে বিষয়টিও দোহার আলোচনায় ওঠার কথা। ২০২০ সালের শেষ দিকে আইএফএবি নিয়মটি পরীক্ষামুলকভাবে বিভিন্ন লিগে করেছিল। ফুটবলারদের চোটের কথা ভেবে নিয়মটি গ্রহণ করেছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ।

সূত্র: প্রথম আলো অনলাইন (১৩ জুন ২০২২)

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *